কাদিয়ানিরা বিশ্বাস করে মির্জা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানি হচ্ছে একজন নবী তার কাছে কোরানের মতো একটি গ্রন্থ নাজিল হয়েছে। তারা দাবী করে ঈসা আঃ মারা গিয়েছেন, কাশ্মীরে তাঁর কবর অবস্থিত। হাদীসে কিয়ামতের পূর্বে যেই ঈসা ইবনে মরিয়ম আঃ আগমনের কথা বলা হয়েছে, সে পূর্বের আগমন কৃত ঈসা আঃ নয়, বরং কাদিয়ানি হচ্ছে হাদীসের ভবিষ্যত বানীকৃত ঈসা, ওরপে মসীহ ঈসা। কাদিয়ানির দাবী সে একই সাথে ইমাম মাহাদী, একজন নবী, উম্মতি নবী এবং ঈসা আঃ। কাদিয়ানিদের বিভিন্ন যুক্তি খন্ডন করা হয়েছে এই ব্লগটিতে, তাদের যুক্তি কতই না হাস্যকর! এছাড়া ইমাম মাহাদী সম্পর্কে সহীহ হাদীসে যেসব কথা বলা হয়েছে, সেসব বর্ণনাও দিয়েছি, সাথে দাজ্জাল সম্পর্কেও খুবই ক্ষুদ্রভাবে আলোচনা আছে এই ব্লগে। পাঠকদের বলব, পর্ব-১ থেকে পড়া শুরু করবেন, এতে বুঝতে সহজ হবে।
এই ব্লগে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানির 'আহমদিয়া' কিংবা 'কাদিয়ানি' মতবাদের অসারতা, যুক্তি-খন্ডন, শেষ নবী, ঈসা আঃ এর অবতরণ, ইমাম মাহাদী এবং দাজ্জাল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
Wednesday, August 20, 2014
পর্ব-৮ ঈসা ইবনে মরিয়ম এবং 'মির্জা কাদিয়ানি' মিল! অমিল!
একটি হাদীস দিয়েই শুরু করি......
“কিয়ামাত পর্যন্ত প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আগমন ঘটবে, তাদের প্রত্যেকেই বলবে; আমি নবী, আমি নবী”
এখানে ভন্ড নবীদের দাজ্জালের সাথে তুলনা করা হচ্ছে। তাই আমরা বলি, মির্জা গোলামও দাজ্জালদের একজন।
বুখারী ও মুসলিম উভয় গ্রন্থে বর্ণিত আছে......
“ঐ সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! অতি শীঘ্রই ঈসা ইবনু মারইয়াম একজন ন্যায় পরায়ণশাসক হিসেবে তোমাদের মাঝে অবতরণ করবেন। তিনি (খ্রিস্টান ধর্মের প্রতীক) ‘ক্রশ’ ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর হত্যা করবেন এবং জিজিয়া তুলে দিবেন, অজস্র ধন-সম্পদ দান করবেন। কিন্তু তা গ্রহণ করার মত (গরীব মানুষ) পাওয়া যাবে না”
- এখানে ‘ঈসা ইবনে মরিয়ম’ এর কথা বলা হচ্ছে, যেই নামে তাঁকে কোরআন এবং হাদীসে সম্বোধন করা হয়েছে। ঈসা আঃ মারা গেলে মোহাম্মদ সাঃ এই হাদীসে ‘ঈসা ইবনে মরিয়ম’ ব্যবহার করতেন না। কারণ মোহাম্মদ সা; মিথ্যা কথা বলেন না। যাই হোক, মির্জা গোলামের নাম, ঈসা নয়, তার নাম মির্জা গোলাম আহমদ, তার মায়ের নাম মরিয়ম নয়, তার মায়ের নাম চেরাগ বিবি।
- বলা হচ্ছে তিনি ‘ন্যায় পরায়ণ শাসক’ হবেন। কিন্তু মির্জার পুরো জীবনে সে কখনো শাসক হয়নি বরং সেই সময় ভারত শাসন করেছিল ব্রিটিশরা, আর মির্জা ছিল তাদের গোলাম।
- তিনি ক্রুশ ভেঙ্গে দিবেন, অর্থাৎ খ্রিস্টান ধর্মের যে ‘ত্রিনিটি’ বা ‘তিন ঈশ্বর’ মতবাদ, তাঁর বিলুপ্তি ঘটাবেন। কিন্তু দূর্ভাগ্য মির্জার জন্মের শত বছর পরেও আজও খ্রিস্টানরা এই ধারণাও বিশ্বাসী এবং ঈসা আঃ কে খোদা বলে স্বীকার করে।
- তিনি শুকর হত্যা করবেন। কারণ খ্রিস্টানরা শুকর হালাল মনে করে। কিন্তু এই ধারণাও ঈসা আঃ এসে বাতিল করে দিবেন। কিন্তু, মির্জা নিজে কোন দিন শুকর হত্যা করে নি! কিংবা খ্রিস্টানরাও শুকরকে আজও খাওয়া ছাড়ছে না।
- জিজিয়া তুলে দিবেন। কারণ জিজিয়া দেয় অমুসলিমরা। ঈসা আঃ পৃথিবীতে আসার পর সব খ্রিস্টান ইহুদী এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী বলতে কিছু থাকবেনা, তাই জিজিয়া করেরও প্রয়োজন থাকবেনা। আর মির্জা জিজিয়া করে তুলে দেয় নাই। বরং আজও জিজিয়া করের প্রথা বিদ্যমান।
- ধন-সম্পদ গ্রহণ করার মতো মানুষ পাওয়া যাবেনা। মির্জার জন্মের প্রায় ১৫০ বছর পরে আজও পৃথিবীর বেশীরভাগ মানুষই দরিদ্র, ধন সম্পদের জন্য সবার মাঝে হাহাকার বিদ্যমান।
- হাদীসে বলা আছে,ঈসা আঃ ‘অবতরণ’ করবেন, আরবীতে ‘নুযুল’। কিন্তু মির্জা অবতরণ করেনি বরং সে পাঞ্জাবে একটি পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছে এবং ক্রমে ক্রমে বড় হয়েছে।
উপরের হাদীসের একটি ‘ভবিষ্যত বানীও’ মির্জার বেলায় সত্য হয় নাই। যেখানে, সব গুলো ভবিষ্যত বানীই সত্য হওয়া প্রয়োজন ছিল।
আরেকটি সূত্রে ইবনু সীরান হতে এক বর্ণনায় এসেছে,
“ইবনু মরিয়াম আঃ অবতরণ করবেন আযান ও ইক্বামতের মধ্যবর্তী সময়ে হালকা হলুদ রঙ বিশিষ্ট দু’খানি চাঁদর ও বর্ম পরিহিত অবশ্তায়। লোকেরা তাঁকে বলবেঃ আপনি অগ্রসর হোন। তখন তিনি বলবেনঃ বরং তোমাদের ইমাম তোমাদেরকে সালাত পড়াবেন। তোমরা একে অপরের ইমাম”।
এই হাদীসে শুধু ‘অবতরনের’ কথাই নেই বরং কোথায়? কি পরে? কীভাবে? অবতরন করবেন তা সহকারে বলা আছে।
অন্য এক হাদীসে , আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত আছে, মোহাম্মদ সা; বলেছেন,
“আমার ও ঈসার মাঝে কোন নবী আসবেনা। অবশ্য তিনি অবতরণ করবেন। তোমরা যখন তাঁকে দেখবে, তখন তাঁকে এভাবে চিনবে যে, ‘তিনি হবেন মধ্যম আকৃতির, তাঁর দেহের রঙ হবে লাল-সাদা মিশ্রিত, তাঁর পরিধানের কাপড় হবে হালকা হলুদ রঙ বিশিষ্ট দু’খানি চাঁদর এবং তাঁর মাথার চুল ভিজে না থাকা সত্ত্বেও সেখান থেকে ফোটায় ফোটায় পানি ঝরতে থাকবে। তিনি ইসলামের জন্য লোকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবেন, ক্রশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর নিধন করবেন এবং জিযিয়া কর রহিত করবেন। মহান আল্লাহ তাঁর সময়ে ইসলাম ছাড়া অন্য সব মতবাদকে ধ্বংস করে দিবেন। তিনি (মিথ্যাবাদী) দাজ্জাল কে হত্যা করবেন। এরপর তিনি পৃথিবীতে চল্লিশ বছর জীবিত থাকার পর ইন্তিকাল করবেন এবং মুসলিমরা তাঁর জানাযার সালাত আদায় করবেন” (আবু দাঊদ, ইবনু হিব্বান, আহমাদ, আবদুর রাযযাক)
- প্রথমতঃ এখানে ঈসা আঃ এর চেহারার বর্ননা দেয়া হয়েছে, তাঁর রঙ হবে লাল-সাদা মিশ্রিত ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি শুধু এখানে কাদিয়ানির একটি ফটো দিব, আপনারাই মিলিয়ে দেখুন।
- এই হাদীসেও আগের হাদীসের মতো শর্ত গুলো দেয়া আছে। অতিরিক্ত বলা আছে তিনি জিহাদ করবেন। কিন্তু মির্জা কাদিয়ানি কোনদিন জিহাদ করেনি বরং ব্রিটিশদের উস্কানিতে সে ‘জিহাদ নিষিদ্ধ’ সংক্রান্ত ফতোয়া দিয়েছে এবং বলেছে, “আমি অসীর কাজ মসীহ দ্বারাই করেছি”। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক ভাবে মোহাম্মদ সা; এর কথা অনুযায়ী ‘ঈসা ইবনে মরিয়ম অসির কাজ অসী দ্বারা-ই করবেন, মসী দিয়ে নয়।
- এই হাদীসে আরো অতিরিক্ত বলা হয়েছে, ঈসা ইবনে মরিয়ম দাজ্জালকে হত্যা করবেন। কিন্তু মির্জা কাদিয়ানি দাজ্জালকে হত্যা তো দূরের কথা বরং দাজ্জাল তো প্রকাশই পায়নি এখনো!!! মির্জা অবশ্য এই সংক্রান্ত একতি মনোরম ব্যাখ্যা দিয়েছে, সে বলেছে যে তার জন্মস্থান পাঞ্জাবের মানুষ দাজ্জাল স্বভাবের। তারাই আসলে দাজ্জাল। মির্জা গোলাম কাদিয়ানির চোখে হয়তো নিম্নের হাদীসটি চোখে পড়েনি না হলে এরও অপব্যাখ্যা দাঁড় করাতো...
হুযাইফা হতে বর্ণিত -একদা রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিকট দাজ্জালের উল্লেখ করা হলে তিনি বলেন, “অবশ্যই আমি তোমাদের পরস্পরের ফিতনাকে দাজ্জালের ফিতনার চেয়েও অধিক ভয় করি। যে ব্যক্তি পূর্ববর্তী ফিতনাসমূহ থেকে নিরাপত্তা লাভ করবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকেও নিরাপত্তা পাবে। ছোট বড় কোন ফিতনাই দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে ভয়ংকর নয়। তার দুই চোখের মাঝখানে লিখা থাকবেঃ কাফির। শিক্ষিত ও অশিক্ষিত প্রতিটি মু’মিন তা পড়তে পারবে” (বুখারী, মুসলিম, আবুদাঊদ, আহমাদ, ইবনু হিব্বান, হাম্বাল)
পাঞ্জাবের মানুষের কপালে অবশ্যই ‘কাফির’ লিখা ছিলনা। শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত ব্যক্তি ‘কাফির’ লিখা দেখবে কীভাবে!
- ঈসা আঃ ৪০ বছর জীবিত থাকবেন ২য় আগমনের পর। মির্জা কাদিয়ানি (১৮৩৫-১৯০৮) ৭৩ বছর জীবিত ছিল।
যাই হোক, ঈসা আঃ দাজ্জাল কে হত্যা করবেন। তাই ঈসা আঃ এর জীবদ্ধশায় দাজ্জাল প্রকাশ ও হত্যা হওয়া বাঞ্চনীয়, যার কোনটাই মির্জার জীবনে ঘটেনি।
সামুরাহ হতে বর্ণিত। মোহাম্মদ সাঃ বলেছেন, “দাজ্জাল বের হবে, তার বাম চোখ হবে কানা। চোখের উপর মোটা চামড়ায় ঢাকা হবে। সে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করবে। সে মৃতকে জীবিত করে লোকদের উদ্দেশ্যে বলবেঃ আমি তোমাদের রব্ব। যে ব্যক্তি বলবে, তুমি আমাদের রব্ব, সে ফিতনায় পতিত হল। আর যে ব্যক্তি বলবে, আমার রব্ব আল্লাহ। এমনকি সে মারা যাবে। সেতো তার ফিতনা থেকে নিরাপদ, এরপর আর কোন ফিতনা হবেনা এবং তার উপর কোন শাস্তিও হবেনা। অতঃপর আল্লাহ যতদিন চান (দাজ্জাল) অবস্থান করবে। অতঃপর পশ্চিম অঞ্চল দিয়ে ঈসা ইবনু মরিয়াম আসবেন। মুহাম্মদ সাঃ কে সত্যয়ন করে এবং তার উম্মাতের একজন হয়ে। অতঃ পর ঈসা আঃ দাজ্জালকে হত্যা করবেন। অতঃপর এর পরেই ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে” (আহমাদ) আর কোরানের সেই আয়াত......
“নিশ্চয়ই ঈসা ইবনে মরিয়াম কিয়ামতের নিদর্শন” (সূরা যুখরুফ-৬১)
- এই হাদীস থেকে জানা যায়, আগে দাজ্জাল প্রকাশ পাবে তারপর ঈসা আঃ অবতরণ করবেন আসমান থেকে।
আরেকটি হাদীসে দাজ্জালকে কোথায় হত্যা করবেন তা বর্ণীত আছে, মোহাম্মদ সা; বলেন,
“ইবনু মারিয়াম দাজ্জালকে বাবে লুদে হত্যা করবেন” (তিরমিযী, ইবনু হিব্বান, তায়ালিসি, আহমাদ, আবদুর রাযযাক, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)
মির্জা কাদিয়ানি বলেছে, লুদ বলতে পাঞ্জাবের লুদিয়ানা শহরকে বুঝানো হয়েছে, যেখানে দাজ্জাল স্বভাবের লোক থাকে!!
এখন তাকে কে বুঝাতে যাবে যে লুদ, পাঞ্জাবের লুদিয়ানা নয়, লুদ হচ্ছে ফিলিস্তিনির একটি শহর যা বর্তমানে ইসরাঈলের অধিনে আছে, আর তা ইস্রাইলের রাজধানী তেল-আবিব থেকে কয়েক মাইল দূরে। আর দাজ্জালের কথা তো আগেই বললাম। নিছে আমি লুদের একটি ভৌগোলিক ম্যাপ দিলাম, তেল আবিব এর নিকটে...
সহীহ মুসলিমের কিতাবুল ঈমান অধ্যায়ের হাদীস......
“......জাফরানী রঙের দু’টি পোশাক পরিহিত অবস্থায় দুইজন ফেরেশতার পাখার উপর হাত রেখে দামেস্ক শহরের পূর্বে অবস্থিত সাদা মিনারের নিকট তিনি (ঈসা আঃ) অবতরন করবেন”
এইবার শুনুন মির্জা গোলামের কাহিনী, সে নিজেই এসে মিনার তৈরী করে নিয়েছে এবং বলছে এটাই সেই মিনার যেটা হাদীসে উল্লেখ আছে।
এখন তাকে কে বুঝাতে যাবে হাদীসে বলা আছে মিনার আগে থেকেই থাকবে, ঈসা ইবনে মরিয়াম আঃ তা তৈরী করবেন না!
এছাড়া ঈসা আঃ এর জীবদ্দশায় ইয়াজুজ মাজুজ প্রকাশ পাবে। এই বিষয়েও বহু সহীহ হাদীস আছে। তা আজ আর উল্লেখ করলাম না।
একটু মুক্তচিন্তা......
যে রাসূল সম্পর্কে কোরআনে প্রায় ১৫ টি সূরায় বলা হয়েছে প্রায় শ’খানেক আয়াতে, যেই রাসূলের মায়ের নামে কোরআনে সূরা আছে, যেই রাসূলের মাত্র ত্রিশ কিংবা ত্রেতিশ বছর জীবনের খুঁটিনাটি বিষয় কোরআনে স্থান পেয়েছে, যেই রাসূলের পরিবারদের কথোপকথন পর্যন্ত কোরআনে আছে, সেই রাসূলের বাকি জীবন (মির্জা কাদিয়ানির দাবিকৃত ১২০-৩৩= ৮৭) সম্পর্কে কোরআনে কোন লাইন নেই?? সেই রাসূল কীভাবে কাশ্মীর গিয়েছিল, সেখানে কীভাবে বাকী প্রায় ৯০ বছর ছিল, কীভাবে ধর্ম প্রচার করেছিল?? কিছুই কোরআনে নেই!! আর মির্জা কাদিয়ানি ‘বৌদ্ধ ধর্ম’ এর বই পুস্তক ঘেঁটে সমাধান দিচ্ছেন তিনি মারা গিয়েছেন, আকাশে উঠেননি!! এই কথা আপনারা বিশ্বাস করেছেন?? যেখানে শত শত হাদীসে মোহাম্মদ সা; ইসা ইবনে মরিয়ম আগমনের কথা বলেছেন!!
পরিশেষে কোরানের সেই আয়াত.........
“যখন ইমরানের স্ত্রী বলল, হে রব! আমার গর্ভে যা আছে, তা আপনার জন্য একান্ত উতসর্গ করলাম; আমার পক্ষে হতে তা কবুল করুন; নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। অতঃপর যখন তাঁকে প্রসব করল, তখন বলল, হে আমার রব! আমি এক কন্যা প্রসব করেছি! অথচ আল্লাহ ভাল করেই জানেন সে কি প্রসব করেছে। (আল্লাহ সান্ত্বনা দিয়ে বললেন) এই কন্যার মতো কোন পুত্রই যে নেই। আর আমি তার নাম রাখলাম ‘মারিয়াম’। (মারিয়ামের মা দোয়া করে বলল, হে আল্লাহ!) আমি তাঁকে ও তার সন্তানদেরকে তোমার আশ্রয়ে সমর্পন করছি, অভিশপ্ত শয়তানের কবল হতে। আল্লাহ বললেন, অতঃপর তার প্রভু তাঁকে উত্তম রুপে গ্রহণ করে নিলেন এবং তাঁকে প্রবৃদ্ধি দান করলেন সুন্দর প্রবৃদ্ধি। আর তিনি তাঁকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে সমর্পণ করলেন। (অতঃপর ঘটনা হল এই যে,) যখনই যাকারিয়া মেহরাবের মধ্যে তার কাছে আসতেন, তখনই কিছু খাদ্য দেখতে পেতেন। তিনি জিজ্ঞেস করতেন, মারিয়াম! এসব কোথা থেকে তমার কাছে এল? মারিয়াম বলত, এসব আল্লাহর নিকট থেকে আসে। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান করেন” (সূরা আলে ইমরান ; ৩৫-৩৭)
“মারিয়াম বলল, কীভাবে আমার পুত্র সন্তান হবে? অথচ কোন মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিনী নই। সে (জিব্রাঈল) বলল, এভাবেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলেছেন, এটা আমার জন্য সহজ ব্যাপার এবং আমরা তাঁকে (ঈসাকে) মানবজাতির জন্য একটা নিদর্শন ও আমাদের পক্ষে থেকে বিশেষ অনুগ্রহরুপে পয়দা করতে চাই। তাছাড়া এটা (পূর্ব থেকে) নির্ধারিত বিষয়” (সূরা মারিয়ামঃ ২০-২১)
পর্ব-৭ ঈসা আঃ এর অবতরণ, ইমাম মাহাদী ও কাদিয়ানির 'ভ্রান্ত মতবাদ' !
ঈসা আঃ এর নাম............
ঈসা আঃ কে কোরআনে মোট চারটি নামে ডাকা হয়েছে। এর মধ্যে ঈসা নামটি কোরআনে এসেছে ২৫ বার এবং ‘মসীহ’ নামটি এসেছে ১১ বার। আর ঈসা আঃ এর নাম ‘ঈসা ইবনে মরিয়ম’ এটা আল্লাহই রেখেছেন, আর মরিয়ম আঃ এর নামও আল্লাহই রেখেছেন, এগুলো মানুষের রাখা নাম নয়।
“যখন ফেরেশতারা বলল, হে মারইয়াম! আল্লাহ তোমাকে নিজের পক্ষে থেকে কালেমার সুখবর দিচ্ছেন, যার নাম ‘মাসীহ ঈসা ইবনে মরিয়ম’ সে সম্মানিত দুনিয়া ও আখিরাতে এবং সান্নিধ্যপ্রাপ্তদের অন্যতম”(সূরা আলে ইমরান-৪৫)
মির্জা দাবি করেছে, ঈসা আঃ মদ খেতেন (মির্জা গোলাম রচিত ‘কিশতিয়ে নূহ’ ৮৭ পৃষ্টা, এই বইটি আহমদিয়া বাংলা ওয়েভসাইটে পাওয়া যাবে)।
চিন্তা করুন! যে রাসূলের জন্মের সুসংবাদ দিছেন আল্লাহ নিজেই এবং তিনি নিজেই তাঁর নাম রেখেছেন এবং বলছেন তিনি দুনিয়া ও আখিরাতে এবং সান্নিধ্যপ্রাপ্তদের অন্যতম,আর ভন্ড মির্জা তাঁকে অপমান করছে!! আর মির্জা নিজেই ছিল ‘আফিম-খোর’ তাই তার পক্ষে এসব ধারণা করা খুবই সহজ।
কোরআন এবং হাদীসে প্রায় বেশীরভাগই ঈসা আঃ কে ‘ঈসা ইবনে মরিয়ম’ নামেই ডাকা হয়েছে। এর কারন এটা আল্লাহর দেয়া নাম আর ঈসা আ; যে ‘কুমারী মাতা’ মরিয়ম আঃ থেকে জন্ম নিয়েছেন এর ওপর জোর দেয়ার জন্য। মরিয়ম নামটিও আল্লাহর দেয়া, “অতঃপর যখন তাকে প্রস্রব করল, তখন বলল, হে আমার রব! আমি এক কন্যা প্রসব করেছি! তাঁর প্রসব সম্পর্কে আল্লাহই ভালো জানেন, ‘ছেলে তো কন্যার মত নয়’ আর আমি তাঁর নাম মারইয়াম রাখলাম” (সূরা আলে ইমরান-৩৬)
ভন্ড কাদিয়ানি এইসব সত্যকে পাশ কাটানোর জন্য একটা গল্প সাজিয়েছে.........
“তিনি (আল্লাহ) বারহীনে আহমদিয়ার তৃতীয় অংশে আমার নাম রেখেছেন মারইয়াম। অতঃপর যেমন বারহীনে আহমদীয়ায় প্রকাশিত হয়েছে, দু’বছর পর্যন্ত আমি মারইয়ামের গুণাবলী সহকারে লালিত হই...অতঃপর মারইয়ামের ন্যায় ঈসার রুহ আমার মধ্যে ফুঁৎকারে প্রবেশ করানো এবং রুপক অর্থে আমাকে গর্ভবতী করা হয়। অবশেষে কয়েকমাস পরে যা দশ মাসের চাইতে বেশী হবেনা। সেই এলহামের মাধ্যমে যা বারহীনে আহমদিয়ার চতুর্থ অংশে উল্লেখিত হয়েছে। আমাকে মারইয়াম থেকে ঈসায় পরিণত করা হয়। এই ভাবেই আমি হলাম ঈসা ইবনে মারিয়াম” (মির্জা গোলাম কাদিয়ানি)
এই হলো তার ব্যাখ্যা! কী আর বলব!! শুধু এইটুকুই বলি, কাদিয়ানি ছিল ব্রিটিশদের দালাল এবং এক বড্ড পাগল!
ঈসা আঃ কে আকাশে উঠে নিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত কোরআনে আয়াত.........
“আমরা আল্লাহর রাসূল ঈসা মাসীহকে হত্যা করেছি; অথচ তারা না তাঁকে হত্যা করেছে, আর না শূলে চড়িয়েছে বরং তাদের কাছে এরুপই মনে হয়েছিল; আর যারা তাঁকে নিয়ে মতভেদ করেছিল তারা, এ ব্যাপারে সন্দেহে ছিল; অনুমান ব্যতীত কোন সঠিক জ্ঞানই তাদের ছিল না; তবে নিশ্চিত যে তাঁকে হত্যা করেনি” (সূরা নিসা-১৫৭)
“বরং আল্লাহ তাঁকে নিজের কাছে উঠিয়ে (রাফা’হ) নিয়েছেন, আল্লাহ পরাক্রমশালী” (সূরা নিসা-১৫৮)
কাদিয়ানিরা এখানে বলে, রাফা মানে তুলে নেয়া নয়, মানে তাঁকে সম্মানে বৃদ্ধি করা হয়েছে। অথচ এটা সম্পূর্ন ভূল অনুবাদ। আগেই বলেছি, কাদিয়ানিরা কোরয়ানকে রুপক বই বানিয়ে নিয়েছে। তাই তারা সব কিছুরই নিজস্ব অর্থ দাঁড় করিয়েছে।
- দ্বিতীয়তঃ ১৫৭ নং আয়াতে বলা হচ্ছিল কাফিররা তাঁকে হত্যা করতে এসেছিল। ইবনে কাসীর তাঁর তাফসীরে লিখেছেন যে ইহুদীরা তাঁকে হত্যার জন্য যখন তাঁর বাড়ী ঘিরে রেখেছিল, তখন তিনি তাঁর একজন হাওয়ারী (সাহাবী) কে বললেন, কে আছ যাকে আমার চেহারার মতো করে দেয়া হবে......। অতঃপর আল্লাহ তখন তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আকাশে আর কাফিররা তাঁর সেই সাহাবী যাকে তাঁর মতো করে দেয়া হয়েছিল তাঁকে হত্যা করে আনন্দ করছিল। (দ্রষ্টব্যঃ আলে ইমরান-৫২ এবং ৫৩)
এখানে ১৫৮ নং আয়াতে সমাধান দেয়া হচ্ছে, যেহেতু ১৫৭ আয়াতে বলা হচ্ছে তাঁকে হত্যা করা হয়নি, শূলেও চড়ানো হয়নি, তাহলে তাঁকে কি করা হয়েছিল কিংবা তিনি সেখানে থেকে কীভাবে রক্ষা পেয়েছেন। সম্মানের দিক থেকে উন্নীত করানো বুঝালে তাঁকে আল্লাহ কীভাবে রক্ষা করেছিল তা বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়া ১৫৮ নং আয়াতে ‘সম্মানের দিক থেকে উন্নীত (রাফা)’ বুঝানোর দরকার টাই কি যেখানে তিনি কীভাবে বেঁচেছিলেন তাঁর সমাধান দেয়া হচ্ছে।
ব্যাপারটা এই রকম, কারো বাসায় আগুন লেগেছে এবং সেখানে একজন মানুষ আটকা পড়েছে আর আপনি তার উদ্ধারের ব্যবস্থা না করে তাঁকে মোবাইল করে বললেন, তোমার মান সম্মান বৃদ্ধি করা হয়েছে, তোমার নামে স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে দেয়া হবে!! আল্লাহ এখানে সমাধান দিচ্ছেন আসলে আল্লাহ কীভাবে তাঁকে রক্ষা করেছেন, “বরং আল্লাহ তাঁকে নিজের কাছে উঠিয়ে (রাফা’হ) নিয়েছেন, আল্লাহ পরাক্রমশালী” (সূরা নিসা-১৫৮) , এবং বলা হয়েছে, আল্লাহ পরাক্রমশালী, আল্লাহর কাছে আকাশে তুলে নেয়া কোন ব্যাপারই না।
- তৃতীয়তঃ রাফা অর্থ শারীরিক তোলা নয় আধ্যাত্মিক ভাবে মর্যাদা উন্নীত করা-এই থিউরী ১৯০০ সালে মির্জার থিউরী। কিন্তু দূর্ভাগ্য কোরানের ব্যাখার দায়িত্ব মির্জার নয় কিংবা ১৯০০ সালে এসে কোরানের নতুন ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর কোন সুযোগ নাই। (সূরা মায়িদা-৩ ‘ইসলাম পূর্ণ করে দেয়া হয়েছে’ সেই সপ্তম শতাব্দীতে যেই দিন এই আয়াত নাযিল হয়, আর কোরআন ব্যাখ্যার দায়িত্ব মোহাম্মদ সাঃ এর আন নাহল-৪৪)
- চতুর্থতঃ কাফেররা যেখানে বাইরে অপেক্ষা করছিল ঈসা আঃ কে মারার জন্য, সেখানে তিনি ঘর থেকে বের হয়ে তাদের সামনে দিয়ে কাশ্মির চলে যাবেন, আর তারা চেয়ে চেয়ে দেখবে এটা অবিশ্বাস্য। আর তাহলে কোরআনে ১৫৮ নং আয়াতে বলা থাকতো ঈসা আ; কে কাফিরদের থেকে রক্ষা করে কাশ্মির পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, ‘ বরং আল্লাহ তাঁকে নিজের কাছে তুলে নিয়েছেন, বলার কোন মানেই হয়না। এখানে ১৫৮ আয়াতের শুরুতে উল্লেখিত 'বাল' হচ্ছে 'retraction particle' যা পূর্ববর্তী কথা 'নাকচ' করে দেয়। এখানে ১৫৭ নং আয়াতে বলা হচ্ছিল, তারা তাঁকে 'শুলে' ছড়ায়নি, তিনি 'মারাও যাননি', (বাল) বরং তাঁকে আল্লাহ তার কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন। এখানে 'রাফাহ' মানে 'মর্যাদায়' উন্নীত বুঝালে পূর্বের আয়াতের অর্থ 'নাকচ' করেনা, কারন 'মর্যাদায়' উন্নীত হলে এখানে 'বাল' শব্দটি কখনোই ব্যবহৃত হতোনা।
- পঞ্চমতঃ রাসূল সাঃ ঈসা আঃ এর আগমণ সংক্রান্ত কয়েক হাজার সহীহ হাদীস হাদীস-গ্রন্থগুলোতে আছে, এখানে শুধু একটা উল্লেখ করি। পোস্টের পরের অংশে আর কিছু হাদীস বলব এই সংক্রান্ত।
আবু হুরাইরা বর্ণনা করেছেন, নবী সা; বলেছেন, “কতইনা আনন্দের কথা! যখন ঈসা ইবনু মারইয়াম আকাশ থেকে তোমাদের মাঝে অবতরণ করবেন, আর ইমাম হবেন তোমাদের থেকে” (বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, ইবনু মানদাহ, বায়হাকী)
এখানে বলাই আছে, ‘ঈসা ইবনে মরিয়ম’-যেই নামটি আল্লাহর দেয়া এবং ‘মরিয়ম’ নামটিও আল্লাহর দেয়া। আর হাদীসে ‘আকাশ’ বা আরবীতে ‘শামা’ শব্দটি উল্লেখিত আছে। আর ‘নুযুল’ শব্দটি –অর্থ ‘অবতরণ’। অবতরন করা হয় ঊপর থেকে, কিন্তু মির্জা গোলাম কখনো অবতরণ করেনি, সে পাঞ্জাবে জন্মে নিয়েছিল এবং ছোট থেকে বড় হয়েছিল। আবার বলি, শব্দটি ‘নুযুল’ মানে ‘অবতরণ’।
- ৬ষ্টতঃ কোরানের সূরা নিসার পরের আয়াতটি মানে ১৫৯ নং আয়াত—
“প্রত্যেক কিতাবী ঈসার মৃত্যুর পূর্বে অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনবে আর কিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন”।
বরং ঈসা আঃ এর ওপর ইহুদীরা এখনো ঈমান আনে নি, আর খ্রিস্টানরা তাঁকে ঈশ্বর বানিয়ে নিয়েছে।
আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, “ঈসা আঃ অবতরণ করবেন। তিনি শুকর হত্যা করবেন, ক্রুশ বিলুপ্ত করবেন, তাঁর জন্য সালাত একত্র করা হবে, তিনি ধন সম্পদ দান করবেন, এমনকি তা গ্রহণ করার মত লোক পাওয়া যাবেনা। তিনি খারাজ তুলে দিবেন। তিনি রাওহাতে অবতরণ করবেন এবং সেখান থেকে হাজ্জ বা ‘উমরাহ করবেন অথবা দুটোই একত্রে করবেন। এরপর আবু হুরায়রা তিলওয়াত করলেন, ‘প্রত্যেক কিতাবী ঈসার মৃত্যুর পূর্বে অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনবে আর কিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন’ (সুরা নিসা-১৫৯)” (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, আহমাদ)
আর ওপরে উল্লেখিত ঈসা আঃ সম্পর্কিত একটি কথাও মসীহ দাবীকৃত মির্জা কাদিয়ানির জন্য সত্য হয়নি। এই নিয়ে পরবর্তী পোস্টে লিখেছি।
সূরা নিসার ১৫৯ অনুযায়ী ইহুদী খ্রিস্টান সহ কিতাবিদের সবাই ঈসা আঃ এর ওপর তাঁর মৃত্যুর পূর্বে ঈমান আনবে। কিন্তু তাঁকে আল্লাহ আকাশে তোলার পূর্বেতো দূরে থাক, আজ পর্যন্তও ইহুদীরা ঈসা আ; কে নবী বলে বিশ্বাস করেনা। তাই তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন, কোরানের এই আয়াত মিথ্যা হয়ে যাবে।তাই কাদিয়ানিদের নিম্নের আয়াতের ব্যখ্যা শুদ্ধ নয়, তারা বলে, “আল্লাহ বলেছেন ঈসা আ; কে মৃত্যু দেবেন। আর আরবীতে ‘মুতাওয়াফফিকা’ অর্থ মৃত্যু, আল্লাহ বলেছেন ঈসা আঃ কে মৃত্যু দিবেন। আর কোরআনে সব জায়গায়ই ‘মুতাওয়াফফিকা অর্থ মৃত্যু করা হয়েছে” (কাদিয়ানিদের ‘ওফাতে ঈসা ও মসীলে ঈসা’ ৭ পৃষ্টা)
এই ব্যাখ্যা ভূল। কারন—
- প্রথমতঃ মুতাওয়াফফিকা শব্দটি এসেছে ‘তাওয়াফফা’ থেকে যার অর্থ ‘নেয়া এবং আদায় করা’। আর কোরআনে এই আয়াতে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, “নিয়ে নিব’ অর্থে ‘মৃত্যু’ অর্থে নয়।কাদিয়ানিরা বলার চেষ্টা করে কোরআনে সব স্থানেই তাওয়াফিফা অর্থ মৃত্যু এসেছে। কিন্তু, এই কথাটিও ভূল, কারন কোরআনে সূরা যুমারের ৪২ নং আয়াতেও ‘তাওয়াফফিকা’ শব্দটি ‘ঘুম’ অর্থেও এসেছে, “আল্লাহ মানুষের প্রাণ নিয়ে নেন, মৃতুকালে আর যে মরেনা তাঁর নিদ্রাকালে”।
- অন্যসব জায়গায় এই অর্থ মৃত্যু হলেই যে ঈসা আঃ এর ব্যাপারেও এর অর্থ মৃত্যু হবে এমনটা নয়, আমাদের দেখতে হবে মোহাম্মদ সাঃ এর অর্থ কী বলেছেন, তিনি কি ঈসা আ; এর অবতরণ সংক্রান্ত কোন হাদীস বলেছেন?? হ্যাঁ বলেছেন। তাহলে এর অর্থ মৃত্যু নয়। কারণ কোরআন আমরা মোহাম্মদ সা; থেকে বেশী বুঝিনা।
- এখানে খ্রিস্টানদের আকীদা যে ঈসা আঃ ঈশ্বর। যদি ঈসা আঃ আসলেই মারা যেত, তাহলে এই আয়াতে আল্লাহ বলতেন, যাও ঈসার কবর দেখে আসো, যে কবরে মিশে গেছে সে কীভাবে ঈশ্বর হতে পারে?? উল্টো তা না বলে কোরানে ঈসা আঃ এর পরবর্তী আগমন সম্পর্কে বলা আছে এবং হাদীসে আছে সকল আহলে কিতাব ঈসা আঃ এর মৃত্যুর পূর্বে ঈমান আনবে।
- এরপরো যদি বলা হয় না ঈসা আঃ এর মৃত্যু অর্থেও এই শব্দ ব্যবহার হয়েছে, তবে তাদের বলব, ঈসা আঃ যে মারা যাবেন তা কি কেউ অস্বীকার করে?? কারন “প্রত্যেক প্রাণিকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে”। ঈসা আঃ ও মারা যাবেন তবে পৃথিবীতে ২য় আগমণের পর। আর এখানে শুধু বর্ণনাতে ঘটনার আগ-পিছ হয়েছে। কোরআনে অনেক জায়গাতেই এটা হয়েছে।
- এখানে আমি আরবদের (sahih international) অনুবাদ কৃত কোরানের একটি অনুবাদ দিব, যা সমগ্র বিশ্বে গ্রহণযোগ্য সাথে ইউসুফ আলীর বিশ্বখ্যাত অনুবাদটিও......তারা ‘মুতাওয়াফফিকা’ অর্থ কি করেছে?? আরবরা?? তারা নিশ্চয়ই কাদিয়ানি থেকে আরবি শিখবে না! সূরা আলে ইমরান ৫৫ নং আয়াত...
Sahih International
[Mention] when Allah said, "O Jesus, indeed I will take you and raise you to Myself and purify you from those who disbelieve and make those who follow you [in submission to Allah alone] superior to those who disbelieve until the Day of Resurrection. Then to Me is your return, and I will judge between you concerning that in which you used to differ.
Yusuf Ali
Behold! Allah said: "O Jesus! I will take thee and raise thee to Myself and clear thee (of the falsehoods) of those who blaspheme; I will make those who follow thee superior to those who reject faith, to the Day of Resurrection: Then shall ye all return unto me, and I will judge between you of the matters wherein ye dispute.
ঈসা আঃ এর অবতরণ সংক্রান্ত কোরানের আয়াত......
“সে (ঈসা ইবনে মরিয়ম) হবে কেয়ামতের একটি নিদর্শন, তোমরা সে (কেয়ামতের) ব্যাপারে কখনো সন্দেহ পোষন করোনা......” (আল যুখরুফ-৬১)
ঈসা আঃ কেয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে অবতরণ করবেন কেয়ামতের নিদর্শন হিসেবে, মানে তখন কেয়ামতের খুব বেশী দেরী থাকবেনা।
“প্রত্যেক কিতাবী ঈসার মৃত্যুর পূর্বে অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনবে আর কিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন”। (সূরা নিসা-১৫৯)
ঈসা আঃ সংক্রান্ত কাদিয়ানিদের ৩০ আয়াতে এর জবাব......
প্রথমত বলে রাখা ভালো, কাদিয়ানিরা ঈসা আ; এর মৃত্যু সংক্রান্ত যেই সব আয়াত দেখায় তার কোথাও ঈসা আঃ এর মৃত্যু হয়েছে লিখা নেই। আর এর বেশীরভাগই ঈসা আঃ সংক্রান্ত আয়াত নয়। আমি আগেই বলেছি, মূসা আঃ সংক্রান্ত আয়াত ঈসা আ; এর বেলায় প্রযোজ্য নাও হতে পারে, আমাদের দেখতে হবে মোহাম্মদ সাঃ ঈসা আঃ এর আগমণ সম্পর্কে কি বলেছেন। আর এখানে কোরআন ব্যাখ্যার কোন নিয়ম নীতিই মানা হয়নি। যাই হোক, এরপরো তাদের ৩০ লাইনের উত্তর দিলাম...
(এই উত্তর গুলো আমার অনেক ব্যাখ্যা সহকারে লিখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু পোস্টটি অতিরিক্ত বড় হয়ে যাওয়ায়, সংক্ষেপে উত্তর দিলাম। কাদিয়ানি ভাইয়েরা এক আয়াত বাড়তি যোগ করে রেফারেন্স দেখবেন)
১। সূরা আলে ইমরানঃ ৫৫ (এটার ব্যাখ্যা আগেই দিয়েছি।)
২। সূরা নিসা ১৫৮; (এটার ব্যাখ্যাও দিয়েছি)
৩। সূরা আল মায়েদা ; ১১৭-১১৮ ( এই বাক্যটিকে ঈসা আঃ এর মৃত্যুর জন্য প্রমাণ করা তাদের কাজ যারা কোরআন এবং হাদীস সম্পর্কে জানেনা, এখানের ঈসা আঃ ও আল্লাহর মধ্যে কথোপকথন টি হবে কেয়ামতের দিন যার আগে ঈসা আঃ পৃথিবীতে অবতরণ করে মৃত্যুবরন করবেন, আয়াতটির পূর্ব আয়াত পড়লেই বোঝা যাবে।)
৪। সূরা নিসা ১৫৯; (এর ব্যখ্যাও দিয়েছি।)
৫। সূরা মায়িদা ৭৫; “মরিয়মের পুত্র মসীহ্ কেবল একজন রসূল। তাঁর পূর্বে সব রসূল অবশ্যই গত হয়ে গেছেন। তাঁর মা ছিল একজন সিদ্দিকাহ্ (সত্যবাদিনী)। তাঁরা উভয়েই খাবার খেত। দেখ! কিভাবে আমরা তাদের জন্য নিদর্শনাবলী সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করছি। আবার দেখ! তাদেরকে কিভাবে বিপথগামী করা হচ্ছে”
এই আয়াতে কোথাও বলা নেই ঈসা আঃ মৃত। বলা আছে তাঁর পূর্বের সব রাসূল মৃত। আর কাদিয়ানিরা ব্যাখ্যা করেছে, তিনি যেহেতু খাবার খেতেন এবং মরিয়ম আঃ ও খাবার খেতেন এবং যেহেতু মরিয়ম আঃ মৃত, তাই ঈসা আঃ ও মৃত। আর নবীরা খাবার না খেয়ে বাঁচতে পারেনা (আহমদিয়া বাংলা ওয়েভসাইট থেকে)।
বোকামীরও একটা সীমা থাকা উচিৎ! এই আয়াত খ্রিস্টানদের উদ্দেশ্যে, তারা ঈসা আঃ এবং মরিয়ম উভয়কেই স্রষ্টা বলে দাবি করে। এবং বলে মরিয়ম হচ্ছেন স্রষ্টার মা, এই জন্য তাঁর পূজা করে। আল্লাহ বলছেন, দেখ, এরা উভয়েই খাবার খায়, আর স্রষ্টা খাবার খায়না কারন স্রষ্টার খাবারের দরকার নাই। এভাবে খ্রিস্টানদের বলা হচ্ছে, দেখ এরা কেউ ঈশ্বর নয়। আর নবী রাসূল সবাই খাবার খেত, তারা কেউ ফেরেশতা নয়, এটা প্রমানের জন্যেই আল্লাহ কোরআনে নবী রাসূলদের এই সব বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন, কারন কাফেররা বলত, নবী রাসূল হবে ফেরেশতা, মানুষ কীভাবে নবী রাসূল হয়। যাই হোক, এই সংক্রান্ত আয়াত আমি আগেই আলোচনা করেছি। আর এই সব বৈশিষ্ট্য যতদিন নবী রাসূল গণ পৃথিবীতে থাকবেন তাদের জন্য প্রযোজ্য, আসমানে থাকা অবস্থায়ও তাদের খেতে হবে এটা কাদিয়ানিরা পেল কোথায়??
৬। সূরা আম্বিয়া ৯; এই আয়াতও একই রকম। কাদিয়ানিরা বলছে, এই আয়াতে বলা হয়েছে, কেউই চিরকাল বেঁচে থাকবে না। (আহমদিয়া বাংলা ওয়েভসাইট)
তো এই কথা কি ঈসা আঃ এর আকাশে উঠা বাতিল করে?? কিংবা কেউ কি বলছে যে ঈসা আঃ মৃত্যুবরণ করবেনা?? উনি মারা যাবে কেয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে আগমনের পর।
৭। সূরা আলে ইমরান ১৪৪; “ মুহাম্মদ একজন রসূল ছাড়া আর কিছুই নয়। নিশ্চই তাঁর পূর্বের সব রসূল গত হয়ে গেছে”
এই আয়াতেও কাদিয়ানিরা কোরআন বিকৃতি করেছে। এখানে সব রাসূলের কথা বলা হয়নি, সঠিক অনুবাদ ‘অনেক রাসূল গত হয়েছেন’। সোজা কথায়, All Messengers নয় Many Messengers। নিছে দু’টি অনুবাদ দিলাম......
Sahih International
Muhammad is not but a messenger. [Other] messengers have passed on before him. So if he was to die or be killed, would you turn back on your heels [to unbelief]? And he who turns back on his heels will never harm Allah at all; but Allah will reward the grateful.
Yusuf Ali
Muhammad is no more than a messenger: many Were the messenger that passed away before him. If he died or were slain, will ye then Turn back on your heels? If any did turn back on his heels, not the least harm will he do to Allah; but Allah (on the other hand) will swiftly reward those who (serve Him) with gratitude.
৮। সূরা আম্বিয়া-৩৪; কেউই চিরকাল বেঁচে থাকবেনা। ঈসা আঃ কে কি কেউ চিরকাল বেঁচে থাকবে বলে দাবী করেছে?? তাঁর মৃত্যু হবে কিয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে অবতরণের পর যেইভাবে সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে।
৯। সূরা বাকারা ১৩৪; এই আয়াতে সব নবী রাসূলদের উম্মাতের কথা বল হয়নি। এখানে শুধু ইসমাইল, ইব্রাহিম, ইসহাক এবং ইয়াকূব আঃ এর উম্মতের কথা বলা হয়েছে (সূরা বাকারা-১৩৩ দেখুন) । আর এখানে তাদের উম্মাত দের কথা বলা হচ্ছে, নবী-রাসূলদের কথা নয়।
১০। সূরা মারইয়াম-৩১; আসমানে পৃথিবীর সিস্টেম চলবে, তা কে বলেছে?? নামায, রোজা, যাকাত এগুলো পৃথিবীর জন্য, আসমানের সিস্টেম আল্লাহই ভালো জানেন।
১১। সূরা মারইয়াম-৩৩ (এখানে মারা যাবে বলা হয়েছে, আর ঈসা আঃ অবশ্যই মারা যাবে)
১২। সূরা হাজ্জ ৬- ঈসা আঃ অবশ্যই মারা যাবেন, কিয়ামতের পূর্বে, আবার বলি কোন মুসলিমই বিশ্বাস করেনা ঈসা আঃ চিরকাল বেঁচে থাকবে।
১৩। সূরা বাকারা-৩৬; এখানে আদম আঃ এর কথা বলা হচ্ছে, আদম আঃ কে বেহেশত থেকে নামিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিল। এখানে বলা হচ্ছেনা মানুষ মাটির দেহ নিয়ে আকাশে যেতে পারবেনা। আদম আঃ বেহেশতে কোন দেহ নিয়ে ছিলেন?? যেখান থেকে তাঁকে নামিয়ে দেয়া হল। আর মোহাম্মদ সাঃ আসমানে এই মাটির দেহ নিয়েই গিয়েছেন।
১৪। সূরা ইয়াসিন-৬৯; এখানে পৃথিবীর আয়ুর কথা বলা হচ্ছে আসমানে অবস্থানরত কারো আয়ুর কথা বলা হচ্ছেনা। আর কাদিয়ানিদের বোকামি সীমা ছাড়িয়েছে, তারা ধরেই নিয়েছে পৃথিবীর ২৪ ঘন্টায় যেমন এক দিন আসমানেও সেই রকম রাত দিন হয়। কত বোকা এরা!
১৫। সূরা রুম ৫৪, ইউনুস ২৪, মুমিনূন ১৫, আয যুমার ২১, ফুরকান-২০, আন নাহল ২০-২১, সূরা আহযাব-৪০, আন নাহল-৪৩, ফজর-২৭-৩০, রূম ৪০, সূরা আররহমান ২৬-২৭, সূরা কামার ৫৪-৫৫, সূরা আম্বিয়া ১০১-১০২, সূরা নিসা-৭৮,
সবগুলোর ব্যাখ্যাই এক, কাদিয়ানিরা বুঝাতে চাচ্ছে ঈসা আঃ কে মৃত্যু বরণ করতে হবে, তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেনা।
আমরাও বলিঃ ঈসা আঃ অবশ্যই মৃত্যু বরণ করবেন। আমি বুঝিনা কাদিয়ানিরা কেন ধরে নিচ্ছে, আসমানে থাকতে হলে পৃথিবীর মতো খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, কিংবা কোরআন কিংবা ইঞ্জিল এর সকল নিয়ম আসমানের জন্য প্রযোজ্য! তাদের বলি, সময় উঠা-নামা করে এই পৃথিবীতেই, আসমানে অতীত, ভবিষ্যত বলে কিছু নেই কিংবা সেখানেও পৃথিবীর মতো ২৪ ঘন্টায় দিন হবে এটা যাদের নূন্যতম জ্ঞান নাই তারাই বলে। কোরাআন কিংবা ইঞ্জিল এর নিয়ম অনুযায়ী পৃথিবীতে চলতে বলা হয়েছে, আসমানে নয়।
সূরা হাশর ৭; কাদিয়ানিদের এই ব্যাখ্যা সব ধরণের ‘কৌতুক’ কে ছাড়িয়ে গিয়েছে। এখানে রাসূল সা; এর আদেশ নিষেধ মানতে বলা হয়েছে, বয়স সম্পর্কে এই আয়াতে কিছু নেই। আর আসমানেও পৃথিবীর মতো সময় বৃদ্ধমান, এটা এই বোকারা কোথায় পেল?? আর ঈসা আঃ মোহাম্মদ সা; এর উম্মত হয়েই পৃথিবীতে বাস করবেন এবং কোরআন মেনেই সব করবেন, বুখারীতে অন্তত তাই দেয়া আছে।
সূরা বনী ইসরাঈল ৯৩; এর ব্যখ্যা আগেই দিয়েছি।
যাই হোক, এই ৩০ আয়াতে ব্যখ্যা আরো বড় করে রেফারেন্স সহকারে দেয়ার ইচ্ছা ছিল, তবে পোস্টটি লিখতে লিখতে ক্লান্ত হয়ে যাওয়ায় অতি সংক্ষেপে উত্তর দিলাম। তবে পরবর্তীতে সময় পেলে, এই ৩০ আয়াতের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সহকারে পোস্ট দিব ইন শা আল্লাহ।
পর্ব-৬ ঈসা আঃ এর অবতরণ, ইমাম মাহাদী এবং কাদিয়ানির 'ভ্রান্ত মতবাদ' !
ঈসা আঃ সংক্রান্ত মিথ্যাচারের জবাব.........
মির্জা গোলাম কাদিয়ানি রচিত ‘মসীহ হিন্দুস্থান মে’(এই গ্রন্থটি আহমদিয়া বাংলা ওয়েভসাইটে আছে) গ্রন্থের ৫২ পৃষ্টায় লিখিত আছে, “হাদীসের সহীহ রিওয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে মোহাম্মদ সা; বলেছেন, মসীহ একশত পচিশ বছর আয়ু লাভ করেছিলেন”।
মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানির অনেকগুলো মিথ্যাচার এর আগেও আমি বলেছি, এটি সেই রকমই একটি মিথ্যাচার। হাদীসের সহীহ কোন রিওয়াত দ্বারা প্রমাণিত?? এটা মোহাম্মদ সাঃ এর প্রতি একটি স্রেফ মিথ্যাচার। আর মোহাম্মদ সাঃ বলেছেন, “যে আমার নামে মিথ্যা রচনা করবে সে তার বাসস্থান পাবে জাহান্নামে” (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সূনানে আবু দাঊদ)। সহীহ রিওয়াত তো দূরের কথা কোন জাল রেওয়াতও নেই এই হাদীসের বিপরীতে!
এই বইয়েরই একই (৫২ পৃঃ) পৃষ্ঠায় লিখিত আছে যে “ইসলামের সকল ফির্কা একমত যে ঈসা আঃ ১২৫ বছর জীবিত ছিলেন। তিনি বিশ্বের বেশীরভাগ দেশ ভ্রমণ করেছেন তাই তাঁকে ‘পর্যটক নবী’ বলা হয়”।
আবার মিথ্যাচারঃ ইসলামের কোন ফির্কা একমত?? বিশ্ব মুসলিম বলতে যাদের চিনে সেই ‘সুন্নী’ কিংবা ‘শিয়া’ কেউই একমত না যে ঈসা আঃ ১২৫ বছর বেঁচেছিলেন, বরং সবাই এই বিষয়ে একমত যে তাঁকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আর কোথায় ঈসা আঃ কে ‘পর্যটক নবী’ বলা হয়েছে??? কোরআনে না হাদীসে?? এই সবই ‘মিথ্যুক’ মির্জার মিথ্যাচার।
এছাড়া একইপৃষ্টায় আরো বলা হয়েছে, রাসুল সাঃ নাকি বলেছেন, “যারা দিন অবলম্বন করে মসীহর দিকে পলায়ন করে”। এই হল মির্জা গোলাম কাদিয়ানির মিথ্যাচারের নমুনা। মোহাম্মদ সাঃ কোন হাদীসে এই কথা বলেছেন??
এছাড়া মির্জা রচিত “মসীহ হিন্দুস্থান মে” গ্রন্থে হাদীসের রেফারেন্স দেয়া হয়েছে, “কনযুল উম্মাল’ গ্রন্থ থেকে!! আমি বুঝিনা কেন যারা মির্জাকে ‘মসীহ’ মানে তাদের মাথায় কেন আসছেন যে, সহীহ মুসলিম, সহীহ বুখারী, আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহ, সুনানে নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত শরীফ কিংবা হাদীসের প্রাচীন গ্রন্থ মুয়াত্তা মালিক –এ ঈসা আঃ সম্পর্কিত কয়েক হাজার হাদীস বর্ণিত থাকতে ‘উদ্ভট’ সব গ্রন্থ থেকে কেন রেফারেন্স দেয়া হচ্ছে?? এটা মির্জার একটা কৌশল যাতে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেয়া যায়।
এবং ‘মসীহ হিন্দুস্থান মে’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ক্রশ থেকে নামার পর নাকি ঈসা আ; এর কাছে আল্লাহ ওহী করেছেন যেন তিনি একদেশ থেকে অন্য দেশে যায় যাতে কেউ তাঁকে কষ্ট না দেয়” (৫২ পৃষ্টা)। এই লাইন মির্জা কোথায় পেল?? এটা কি কোরআনে আছে??
কোরআনে ঈসা আঃ সম্পর্কে এত কিছু বলা আছে, তার প্রায় ৩৩ বছরের (আসমানের উঠার আগ পর্যন্ত) জীবন সম্পর্কে ১৫ টি সূরার ৯৮ আয়াতে বর্ণিত আছে, তার মায়ের নামে একটি সূরার নামকরণ করা হয়েছে (সূরা মরিয়াম ১৯ নং সূরা), এছাড়া তাঁর নানা বা মারিয়াম আঃ এর পিতার নামে (সূরা আলে ইমরান সূরা নং ৩), এছাড়া তিনি আল্লাহর শ্রেষ্ঠ পাঁচজন রাসূলদের একজন (আল কোরআন ৩৩;৭ এবং ৪২;১৩) , অথচ তাঁর ক্রুশ থেকে কাশ্মির যাওয়া সম্পর্কে কোন আয়াত নাই, তাঁর কাশ্মির বাস সম্পর্কে কোন আয়াত নাই (যদিও মির্জা দাবি করেছে ঈসা আঃ কাশ্মিরে প্রায় ১২০-৩৩ = ৮৭ বছর বেঁচেছিল)। এবং মির্জার দাবি অনুযায়ী আল্লাহ ঈসা আঃ এর কাছে ক্রুশ থেকে নামার পর (মসীহ হিন্দুস্থান মে ৫২ পৃষ্টা) যেই অহী নাযিল করেছে, তা কোরআনে স্থান পেলোনা??!!!
এইবার শুনু ঈসা আঃ যে কাশ্মিরে গিয়েছেন তা মির্জা পেল কোথায়??
‘মসীহ হিন্দুস্থান মে’ গ্রন্থের মুখপ্রবন্ধে আছে............
“বৌদ্ধ ধর্মের প্রাচীন রেকর্ড পত্র থেকেও ইমামা মাহাদী আঃ (মির্জা কাদিয়ানি) প্রচুর তথ্য প্রমান উপস্থাপন করেন। বৌদ্ধধর্ম সংক্রান্ত বিভিন্ন রেকর্ড এবং দলিল-দস্তাবেজ থেকে তথ্যাদি উদ্ধার করে একটা জটিল বিষয়ের সমাধান দিয়েছেন”
এই হলো অবস্থা!! এটা চিন্তা করতেও কষ্ট হয়, ইমাম মাহাদী কিংবা ইসলামের কোন নবী কিংবা কোন রাসূল বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থ গবেষণা করে ঈসা আঃ এর মৃত্যুর সমাধান দিচ্ছেন!!
আমরা বলিঃ হ্যাঁ, মির্জা কাদিয়ানি বৌদ্ধ ধর্ম, শিখ ধর্ম, জৈন ধর্ম থেকেই সমাধান দিবেন!! তিনি গৌতম বুদ্ধ থেকেই সমাধান দিবেন!! মির্জা সাহেবকে বলি, বৌদ্ধ ধর্ম থেকে আপনি এই টা কে সমাধান দিলেন না যে ঈশ্বর বলতে কেউ নেই?? কারণ বৌদ্ধ ধর্মে ঈশ্বর বলতে কেউ নাই, তাদের দলিল-দস্তাবেজ অন্তত তাই বলে, ত্রিপিটক অন্তত তাই বলে।
কোরআন হাদীসের ব্যাখ্যা ও মির্জার কূট (অপ) কৌশল.........
কোরানের কোন আয়াতের ব্যাখ্যা করতে হলে-
প্রথমতঃ দেখতে হবে কোরআনে ঐ সম্পর্কে অন্য আয়াতগুলোতে কি বলা আছে। সোজা কথায়ঃ ঈসা আঃ সংক্রান্ত আয়াতের ব্যখ্যা করতে হলে ঈসা আঃ সংক্রান্ত অন্য যেসব আয়াত কোরআনে বর্ণিত হয়েছে ঐগুলো দেখতে হবে। এবং
দ্বিতীয়তঃ রাসূল সাঃ এই আয়াত সম্পর্কে কী বলেছে তা দেখতে হবে, মানে হাদীস দেখতে হবে, কোরানের ব্যাখ্যা করা ছিল রাসূল সাঃ এর দায়িত্ব,
আল্লাহ বলেন- “আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি কোরআন যাতে আপনি মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেন যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যেন তারা ভেবে দেখে”। -(সূরা আন নাহল-৪৪)
আর রাসূল সাঃ ও ‘স্পষ্টভাবে’ আমাদের কোরআন বুঝিয়ে দিয়েছেন, এবং আয়াত নাযিল হল
-
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরীপূর্ণ করে দিলাম, আর তোমাদের ওপর আমার (প্রতিশ্রুত) নেয়ামতও পূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের জন্য জীবন বিধান হিসেবে আমি ইসলামকেই মনোনীত করলাম”। (আল মায়েদা-৩)
অর্থাৎ ইসলাম পরিপূর্ন যখন এই আয়াত নাযিল হয় তখন থেকেই। তাই কোরআন ব্যাখ্যা করতে হবে রাসূল সাঃ যেভাবে করেছেন এবং বুঝতে হবে সাহাবাগণ যেভাবে বুঝেছেন। সব ভাষার মত আরবীতেও এমন অনেক শব্দ রয়েছে যার বিভিন্ন রকম অর্থ হয়। এক্ষেত্রে কোরআনে কোন অর্থে শব্দটি এসেছে তা দেখতে হলে, কোরআনে ‘একই বিষয়বস্তু’ সম্বলিত আয়াতগুলো দেখতে হবে। মানে মূসা আঃ সম্পর্কিত ব্যবহৃত কোন ‘শব্দ’ এর ব্যখ্যা ঈসা আঃ সম্পর্কিত আয়াত দ্বারা দেয়া যাবেনা যদিনা মোহাম্মদ সা; এর ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। আর সর্বক্ষেত্রেও হাদীসে দেখতে হবে, এই আয়াতের ব্যখ্যা কীভাবে করা আছে।
কিন্তু ব্রিটিশদের গোলাম মির্জা কোরানের অপব্যাখ্যার জন্য নতুন কৌশল নেয়। সে প্রমাণ করতে গেল, ঈসা আঃ মৃত। তাই সে মুসলিম ও বুখারী সহ ঈসা আঃ এর অবতরণ কিংবা কিয়ামতের পূর্বে আগমন সংক্রান্ত হাজার হাজার সহীহ হাদীসকে পাশ কাটিয়ে কোরানের নতুন ব্যাখ্যা দাড় করাল।
আর কাদিয়ানিদের কৌশল হচ্ছে, তারা কিছু আরবি শব্দের ব্যাখ্যা শুরু করেছে যেমন তাওয়াফফিকা কিংবা রাফা। এখন একজন ব্যক্তি যে আরবি জানেনা তাকে যদি বলা হয় রাফা মানে সশরীরে উঠানো নয়, রাফা মানে মর্যাদায় বৃদ্ধি করা তাহলে সে কী বুঝবে!! আমার এক বন্ধু কয়েকদিন আগে আমাকে ‘রাফা’ শব্দটির ব্যখ্যা দিচ্ছিল। আমি আমার সেই বন্ধুটিকে বলি, তুমি নিজেও এর অর্থ জানোনা, কিংবা তুমি আরবি ব্যাকরণ তো দূরের কথা আরবী সাধারন কথাও জানোনা। তুমি, কাদিয়ানিদের রচিত ‘মসীলে ঈসা কিংবা ওফাতে ঈসা’ গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছ। কিন্তু তুমি কি একটি বারও যাচাই করে দেখেছ কিনা যে ‘রাফা’ আসলে কোরআনে কি অর্থে উক্ত আয়াতে এসেছে কিংবা মোহাম্মদ সা; ঈসা আঃ এর ভবিষ্যত আগমন সম্পর্কে কি বলছে??
আর মোহাম্মদ সা; এর মৃত্যু পর থেকে শুরু করে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত জন্ম নেয়া কয়েকশ কোটি আরব কোরানের আরবী বুঝে নাই আর মির্জা কাদিয়ানি ভারতে জন্ম গ্রহণ করে আরবদের আরবি শেখাচ্ছে!! খুবই মজার বিষয়। ব্যাপারটা অনেকটা এই রকম, ইংল্যান্ড থেকে একজন ইংরেজ এসে ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কিংবা প্রমথ চৌধুরীকে বাংলা ব্যাকরণ শেখাচ্ছে!! এই জন্যেই কাদিয়ানিদের সব আরব দেশে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়!! এমনকি উপমহাদেশের পাকিস্তানেও বর্তমানে তাদের অমুসলিম ঘোষনা করা হয়েছে ।
আর হাদীস সংক্রান্ত মির্জার জ্ঞান, তার ভাষায় শুনুন-----
“তবে হাদীস, ঊসূল ও ফিকহ শাস্ত্রে আমার গভীর জ্ঞান অর্জনের সুযোগ হয়নি। নামমাত্র কিছু পড়াশোনা করেছি” (গোলাম কাদিয়ানির রচিত ‘আত-তাবলীগ ইলা মাশাইখিল হিন্দ’ থেকে)
আর আরবি সংক্রান্ত কাদিয়ানির আরেকটু ধারণা জেনে নেই.........
গোলাম কাদিয়ানি তার ‘আইনুল মা’রেফাত’ নামক গ্রন্থের ২৮৬ পৃষ্ঠায় লিখেছে (১ম সংস্করণ), “রাসূল সা; এর এগারো জন পুত্র জন্ম গ্রহণ করেন এবং সবাই মারা যান”।
অথচ সত্য হল রাসূল সাঃ এর পুত্র সংখ্যা ছিল মাত্র ৪ জন।
গোলাম কাদিয়ানি তার ‘তিরইয়াকুল কুলুব’ গ্রন্থে লিখেছে,
“প্রতিশ্রুত সন্তান ইসলামী মাসের চতুর্থ মাস অর্থাৎ সফরে জন্ম গ্রহণ করেছেন” । কথা হল, সফর কি আরবি ৪র্থ মাস??
‘আর ঈসা আঃ কে আকাশে তোলা হয়নি তিনি মারা গেছেন’-এই ধারণা মির্জা কাদিয়ানি আবিষ্কার করে ১৮৮০ সালের পরে। তার মানে সেই ৬০০ সাল থেকে ১৮০০ সালের আগ পর্যন্ত সবাই ভূল বুঝেছিল কোরানের অর্থ?? এমনকি মোহাম্মদ সা; এবং সাহাবীগণও?? অথচ কোরআনে আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, “আমিই স্বয়ং এ কোরআন নাযিল করেছি এবং আমিই স্বয়ং এর হেফাজত কারী” (সূরা আল হিজর-৯) । কাদিয়ানি ভাইদের বলি, এই আয়াত কি ১৯০০ সালে নাযিল হয়েছিল?? না সপ্তম শতাব্দীতে??
এই আয়াত মোহাম্মদ সাঃ এর যুগেই নাযিল হয়েছে, পরে নয়। মানে মুসলমানরা, সাহাবারা ঈসা আঃ সংক্রান্ত যেই আয়াতের অর্থ যেভাবে বুঝেছেন ঠিক সেভাবেই বুঝতে হবে না হলে আল হিজরের এই আয়াত মিথ্যা হয়ে যাবে। কারণ না হলে, আল্লাহ কি ৭০০ খ্রি; -১৮০০ খ্রিঃ পর্যন্ত কোরআন এর অর্থ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন?? আর কিছু ভ্রান্ত কাদিয়ানি ছাড়া বিশ্বে সকল মুসলিম কোরানের এই অর্থেই বিশ্বাস করে যে ঈসা আঃ কে আকাশে তুলে নেয়া হয়েছে।
কাদিয়ানিরদের যুক্তিঃ মানুষ আকাশে যেতে পারেনা (‘ওফাতে ঈসা ও মসীলে ঈসা’ গ্রন্থ থেকে, এটি এখনও আহমদিয়া বাংলা ওয়েভসাইটটিতে পাওয়া যাবে), বইটির ৬ পৃষ্টা থেকে......
প্রথমতঃ এখানে শুরুতেই কাদিয়ানিদের স্বভাব অনুযায়ী কোরানের ভূল অনুবাদ করা হয়েছে!! ব্র্যাকেটের মধ্যেকার “(অনর্থক কার্য করা)” কি কোরানে আছে?? না নেই। এটা তাদের অতিরিক্ত বসানো। এছাড়া এখানে, “আমার প্রভু এই সকল থেকে পবিত্র” অনুবাদও সঠিক নয়। কারণ “এই সকল থেকে” অনুবাদটি কাদিয়ানিরা নতুন করে বসিয়েছে। আসল অর্থ হচ্ছে, “ক্বুল সুবহা-না রব্বী হাল কুনতু ইল্লা-বাশাররা রসূলা” অর্থ “বলুন, পবিত্র আমার রব। আমি একজন রাসূল ছাড়া আর কিছুই নই”। নিছে আয়াতের এই অংশের প্রত্যেকটি শব্দের অর্থ ভেঙ্গে ভেঙ্গে দেয়া হল
০১। ক্বুল (বলুন) ০২। সুবহা-না (পবিত্র/প্রশংসিত) ০৩। রব্বী (আমার রব) ০৪। হাল (যা, what) ০৫। কুনতু (আমি হই) ০৬। ইল্লা (কিন্তু) ০৭। বাশাররা (একজন মানুষ) ০৮। রসূলা (একজন রসূল, বার্তাবাহক)
আবার বলি, এই অংশের অনুবাদ হচ্ছে,
সঠিকঃ “বলুন, পবিত্র আমার রব। আমি একজন রাসূল ছাড়া আর কিছুই নই”
কাদিয়ানীঃ “তুমি এদেরকে বলে দাও যে আমার প্রভু এই সকল (অনর্থক কার্য করা) থেকে পবিত্র।
Sahih International
Or you have a house of gold or you ascend into the sky. And [even then], we will not believe in your ascension until you bring down to us a book we may read." Say, "Exalted is my Lord! Was I ever but a human messenger?"
Yusuf Ali
"Or thou have a house adorned with gold, or thou mount a ladder right into the skies. No, we shall not even believe in thy mounting until thou send down to us a book that we could read." Say: "Glory to my Lord! Am I aught but a man,- a messenger?"
আর সূরা বনী ইসরাঈলের ৯০-৯৩ আয়াত......
“আর তারা বলল, আমরা কখনোই ঈমান আনয়ন করব না মাটি হতে প্রস্রবণ প্রবাহিত ছাড়া। আর তারা বলল, আমরা কখনোই ঈমান আনয়ন করব না মাটি হতে প্রস্রবণ প্রবাহিত ছাড়া। অথবা খেজুর বা আঙ্গুরের এমন একটি বাগান থাকবে আর তুমি সে বাগানে বহু নহর প্রবাহিত করে দেব। অথবা তোমার বর্ণনানুযায়ী আকাশকে খন্ড-বিখন্ড করে আমাদের ওপর ফেলবে কিংবা আল্লাহ ও ফেরেশতাদেরকে সামনে আনবে। অথবা সবর্ণ নির্মীত কোন ঘর থাকবে, অথবা আকাশে আরোহণ করবে, কিন্তু তোমার আরোহণ করাকেও কখনও বিশ্বাস করবেনা, যতক্ষণ না আমাদের জন্য পথনযোগ্য কিতাব না দাও। বলুন, পবিত্র আমার রব। আমি একজন মানুষ, একজন রাসূল ছাড়া আর কিছু নই”
এখানে কাফিররা মোহাম্মদ সা; এর কাছে এসে বললো তুমি যদি আল্লাহর রাসূল হও তবে এগুলো এগুলো করে দেখাও। কিন্তু এগুলো করে দেখালেও তারা কখনোই ঈমান আনতো না, তারা শুধু মাত্র মোহাম্মদ সাঃ কে অপমাণ করার জন্য এগুলো বলেছে। (দ্রষ্টব্যঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর)
কিন্তু কাদিয়ানিরা এর অর্থ করেছে রাসূল সাঃ আকাশে উঠা আল্লাহর স্বভাব বিরুদ্ধ। অথচ রাসূল সাঃ শুধু আকাশে নয় এখানের সব গুলো দাবীও যদি পূরণ করতেন তবেও কাফিররা মুসলিম হতোনা। আল্লাহ এটা ভালো করেই জানেন। এজন্যেই লাইনের পরবর্তী অংশ ‘বলুন পবিত্র আমার রব। আমি একজন রাসূল ছাড়া আর কিছু নই’। অর্থঃ আমি তো শুধু সতর্ককারী (দ্রষ্টব্যঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর)।
আর এই লাইনের ব্যাখ্যা যদি এই করা হয় যে, রাসূল সাঃ আকাশে উঠে দেখাননি তাই আকাশে উঠা আল্লাহর নীতি বিরুদ্ধ। তাহলে এখানে কাফিরদের করা অন্যান্য দাবী গুলোও আল্লাহর নীতি বিরুদ্ধ হবে। কাফিরদের অন্যান্য দাবী...
- মাটি হতে প্রস্রবণ প্রবাহিত করা (আল্লাহ কী মাটি হতে প্রস্রবণ প্রবাহিত করেন না?? বিশ্বে কি ঝর্ণা বা পানির স্রোত মাটি থেকে বের হয়না??
- খেজুর বা আঙ্গুরের একটি বাগান (বিশ্বে খেজুর বা আঙ্গুরের বাগান কি নেই??)
- আকাশকে খন্ড-বিখন্ড করা (এখানে কেয়ামতের কথা বলা হচ্ছে। আর আকাশকে খন্ড বিখন্ড কি আল্লাহ করবেন না??)
- সবর্ণ নির্মিত ঘর সামনে আনা (সবর্ণ নির্মিত ঘর কি তৈরী অসম্ভব??)
- পাঠযোগ্য কিতাব (কোরআন কি পাঠযোগ্য কিতাব নয়?)
আসলে এখানে কাফিররা শুধু মোহাম্মদ সাঃ কে অপমাণ করার জন্য এসব করতে বলেছে। কিন্তু আল্লাহ জানেন, এসব করলেও তারা মুসলিম হবেনা। যেমন “আরোহন করাকেও কখনও বিশ্বাস করবেনা, যতক্ষণ না আমাদের পাঠযোগ্য কিতাব না দাও”। অথচ তাদের প্রতি কোরআন নাযিল হয়েছিল, যা পাঠযোগ্য!!
আর শেষে ‘আমি একজন মানুষ, একজন রাসূল ছাড়া আর কিছু নই’ এর মানে এটা না যে মানুষ আকাশে যেতে পারেনা। পরবর্তী দু’টি লাইন পড়লেই এটা সহজে বুঝা যায়,
সূরা বনী ইসরাঈল ৯৪ এবং ৯৫ আয়াত......
“হেদায়েত আসলে ঈমান হতে লোকদেরকে বিরত রাখে শুধু এ উক্তিটি, আল্লাহ কি মানুষকে রাসূল করে পাঠালেন? বলুন, ফেরেশতারা যদি নিশ্চিন্ত মনে ভূপৃষ্টে বিচরণ করত তবে আমি আকাশ হতে ফেরেশতাই প্রেরণ করতাম রাসূল করে”
কাফেররা এখানে শুধু মাত্র মোহাম্মদ সাঃ কে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করার জন্য বলে, মানুষ কীভাবে ফেরেশতা হয়?? এটা তাদের কথা কথা। আল্লাহ বলেন, পৃথিবীতে যদি মানুষ না থেকে ফেরেশতা থাকত তবে তিনি ফেরেশতাই পাঠাতেন। এবং আগের বাক্য, আমি তো মানুষ এবং রাসূল ব্যতিরেকে কিছুই নই। মানে আমি মানুষ, মানুষের জন্য নবী হিসেবে মানুষই আসবে ফেরেশতা নয়। আর তোমাদের দাবী যদি আল্লাহ চান তবে আমি পূরণ করতে পারব, না চাইলে পারবোনা, কারণ আমি মানুষ।
আর কাফেরদের এইরকম অনেক দাবী মোহাম্মদ সাঃ মো’জেযা স্বরূপ পূরণ করেছেনও...যেমনঃ চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করা। আল্লাহ বলেন, “ক্বিয়ামত নিকটবর্তী হয়ে গেছে এবং চন্দ্র বিদীর্ণ হয়ে গেছে” (সূরা ক্বমার-১)
এখানে কাফিররা মোহাম্মদ সাঃ কে চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করার দাবী করলে, আল্লাহর নির্দেশে তিনি তা করেন। এরপরো অনেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আল্লাহ বলেন,
“আর কোন নিদর্শন দেখেও তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, এবং বলে এটা তো চলমান যাদু” (সূরা ক্বমার-২)
তাহলে এসব নিদর্শন দেখানো আল্লাহর নিয়মের ভিতরেই, নিয়মের বাইরে নয়, আর রাসূলদের মু’জিযা সাধারন মানুষের জন্য নিয়মের বাইরে, রাসূলদের জন্য নয়। যেমনঃ মূসা আঃ লাঠিকে সাপে পরিণত করেছেন। লাঠি দিয়ে সাগর দ্বিখণ্ডিত করেছেন। এছাড়া ঈসা আঃ মৃত মানুষকে জীবিত করেছেন, জন্মন্ধ কে ভাল করেছেন, মাটি দিয়ে পাখি তৈরী করে উড়িয়েছেন, কিংবা পিতা ছাড়া জন্ম গ্রহণ করেছেন। এসব কী আল্লাহর নির্দেশের বাহিরে হয়েছে?? তাহলে এই কথা খাটেনা, এসব আল্লাহর নিয়মের মধ্যে নয় যে মানুষকে আকাশে উত্তোলন করা।
এছাড়া কাদিয়ানিদের উক্ত ব্যাখ্যায়, সূরা বনী ইসরাঈল এর যেই আয়াত দেয়া হয়েছে তারও অপব্যখ্যা দেয়া হয়েছে...... “আল্লাহ নিয়মের কখনো ব্যতিক্রম করেন না”
হ্যাঁ। আল্লাহ নিয়মের কখনো ব্যতিক্রম করেন না। তবে আল্লাহর নিয়মটা কি তা বুঝতেই কাদিয়ানিরা ভূল করছে কিংবা অপব্যখ্যা দিচ্ছে। আয়াতটি সূরা বানী ইসরাঈলের ৭৭ নং আয়াত......পুরো আয়াতটি হল..... “তারা তো চেয়েছে আপনাকে দেশ হতে বের করতে। আর যদি এরুপ ঘটেই যেতো তবে আপনার পর সেখানে স্বল্পকাল টিকে থাকত। আপনার পূর্বে আমি যত রাসূল প্রেরণ করেছি, এরুপই তাদের নিয়ম ছিল, আর আপনি আমার নিয়মের ব্যতিক্রম পাবেন না” (সূরা বানী ইসরাইল আয়াত ৭৬ ও ৭৭)।
কাফেররা মোহাম্মদ সাঃ কে দেশ (মক্কা) থেকে বের করার হুমকি দিয়েছিল কিংবা বের করও দিয়েছিল। এবং পরবর্তীতে মোহাম্মদ সাঃ বিজয়ীর বেশেই মক্কাতে ফিরলেন। আল্লাহ তাই বলেছেন, আপনার পূর্বের সকল নবী রাসূলকেও এই রকম লাঞ্ছিত করা হয়েছিল, দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা আবার বিজয়ের বেশে দেশে এসেছেন এবং আপনাকেও অন্যান্য রাসূলদের মতো সাহায্য করা হবে, মানে আপনি আল্লাহর এই নিয়মের কোন ব্যাতিক্রম পাবেন না যেই নিয়ম ছিল পূর্ববর্তী রাসূলদের বেলায়। একটি উদাহরণ দেয়া যাক, রাসূলদের আল্লাহ ওহী দেন তাই এখানে আল্লাহর নিয়ম হচ্ছে রাসূলদের ওহী দেয়া আর সাধারণ মানুষ ওহী পায়না এখানে আল্লাহর নিয়ম সাধারন মানুষ ওহী পাবেনা। আবার রাসূলদের আল্লাহ বিভিন্ন মু’যেজা দেন কিন্তু সাধারণ মানুষকে দেন না, রাসূলদের নিয়ম আর সাধারন মানুষদের নিয়ম একনা। তাই সাধারন মানুষ আকাশে যেতে পারবেনা তার মানে এই না যে রাসুলরাও আকাশে যেতে পারবেনা। আর সাধারণ মানুষ আকাশে যাচ্ছেনা?? বর্তমান যুগ কি বলে??
আর মোহাম্মদ সাঃ মিরাজে আসমানে গিয়েছেন, তবে ঈসা আঃ কেন যেতে পারবেনা?? এখানে কাদিয়ানিরা অপব্যাখ্যা দেও...যে মোহাম্মদ সাঃ মিরাজে গিয়েছেন আধ্যাত্মিকভাবে। অথচ শত শত হাদীস আছে তার সশরীরে যাওয়ার ব্যাপারে। অথচ আমি কাদিয়ানি ভাইদের বলব, মোহাম্মদ সাঃ আধ্যাত্মিকভাবে মিরাজে গিয়েছেন এই রকম একটা সহীহ হাদীস দেখান। আছে কি এই সম্পর্কে কোন সহীহ হাদীস??
মিরাজ সম্পর্কে আমি এখানে শুধু ৫ টা সহীহ হাদীস দেবো, মিরাজ সম্পর্কে যেহেতু এই পোস্ট নয়, তাই আমি এই নিয়ে এখানে বেশী আলোচনা করবোনা। পরে এই নিয়ে ইনশাআল্লাহ বিস্তারিত আলোচনা হবে।
- আবু যর কর্তৃক বর্ণিত আছে যে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এর বক্ষ বিদীর্ণ করিয়া তাঁর পেটের উর্ধব হইতে নিম্ন দেশ পর্যন্ত ফাঁড়া হইয়াছিল এবং তাঁহার কলব বাহির করিয়া সুরক্ষিত জমজম শরীফের পানি দ্বারা ধৌত করা হইয়াছিল” (সহীহ মুসলিম)
আধ্যাত্মিক কোন কিছু হইলে অবশ্যই শরীর কেটে ক্বলব বের করে পানি দিয়ে ধোয়ার ব্যাপার ঘটতোনা।
- অন্য হাদীসে আছে, “অতঃপর ক্বলব কে নিজ স্থানে রাখিয়া জখম ভাল করিয়া দিয়াছিল” (সহীহ মুসলিম)
আধ্যাত্মিক কোন কিছুর যখন হয়না, তাই ভাল করার ও দরকার হয়না।
- “অতঃপর প্রিয়তম নূর নবীর নিকট বোরাক নামে সাদা রঙয়ের একটি জন্তু উপস্থিত করা হইল। যাহা গর্দভ হইতে কিঞ্চিত উঁচু এবং খচ্চর হইতে কিঞ্চিত নীচু ছিল। উহার গতি বিদ্যুতের ন্যায় এইরুপ ছিল যে ইহার এক একটি পা তাঁহার দৃষ্টির শেষ প্রান্তে ফেলিত” (সহীহ মুসলিম)
আধ্যাত্মিক ভ্রমণের জন্য বাহন প্রয়োজন হয়না। বাহনের বিবরণ তো দূরে থাক।
- হযরত আনাস রাঃ বলেন, মোহাম্মদ সাঃ বলেছেন, “আমি নিজেই বোরাককে একটি গোলকের সহিত বাঁধিয়াছিলাম যাহার সহিত আম্বিয়া আঃ গণ তাহাদের সওয়ারী গুলো বাঁধিয়াছিল” (সহীহ মুসলিম)
উল্লেখ্যঃ এখানে বাইতুল মাকদিস এ সওয়ারী বাঁধার কথা বলা হচ্ছে।
আগেই বলেছি, আধ্যাত্মিক ভ্রমণে কোন বাহন লাগে আর বাঁধা তো দূরের কথা। অথচ মোহাম্মদ সা; বলছেন, উনি নিজ হাতে সওয়ারী বেঁধেছিল।
- অন্য বর্ণনায় আছে, “মোহাম্মদ সা; নামায শেষ করিয়া বাহিরে তাশরিফ আনিলেন সেই সময় জিবরাঈল আঃ এক পাত্রে শরাব আর এক পাত্রে দুগ্ধ লইয়া হুজুরের সমীপে পেশ করিলেন। হুজুর বলেন, আমি দুগ্ধ পাত্রকেই গ্রহণ করলাম। ইহাতে জিবরাঈল সাঃ বললেন আপনি ফিতরাত গ্রহণ করেছেন। অতঃপর আসমান পথে উঠিয়া গেলেন” (মুসলিম)
আধ্যাত্মিক কোন ভ্রমণে দুগ্ধ পান করা যায়না।
সবচেয়ে বড় কথা মিরাজ যে আধ্যাত্মিক এটা কাদিয়ানিরা পেল কোথায়?? কাদিয়ানিরা এও বিশ্বাস করে ঈসা আঃ যে মানুষকে জীবিত থেকে মৃত করেছেন তা বাস্তবে নয়, তা হচ্ছে মানসিক বা আধ্যাত্মিকভাবে মৃত মানুষকে জীবিত করেছেন। কথা হচ্ছে, এই কথাও মির্জা গোলাম পেল কোথায়?? যে ঈসা আঃ মৃতকে জীবিত করেছেন আধ্যাত্মিকভাবে।
অথচ আল্লাহ বলেন, “আর যখন তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াত পঠিত হয়...” (সূরা ইউনুস-১৫)
“এভাবে স্পষ্ট নিদর্শনরুপে তা (কোরআন) নাযিল করেছি, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎ পথ প্রদর্শন করেন”(সূরা হাজ্জ-১৬)
কোরআন স্পষ্ট ভাবেই নিদর্শন বর্ননা করে, আধ্যাত্মিকতার স্থান নেই। আর কোন কিছু আধ্যাত্মিক হতে হলে স্পষ্টভাবে কোরআন বা হাদীসে বর্ণনা থাকতে হবে যে ঐ ঘটনাটি আধ্যাত্মিক।
আসলে মির্জা কাদিয়ানি ইসলামটাকেই ‘রুপক’ বানিয়ে দিয়েছে আর কোরয়ানকেও সম্পূর্নরুপে রুপক বানিয়ে অপব্যখ্যা দিয়েছিল, কারণ তার প্রভু ব্রিটিশদের জন্য ‘ইসলাম’ ছিল বিপদ স্বরূপ। তাই ব্রিটিশরা চেয়েছে যাতে করে মুসলিমরা ‘প্রাক্টিক্যাল ভাবে’ ধর্ম চর্চা না করতে পারে। এজন্যেই মির্জার ভাষ্য, “আমি অসির কাজ মসী দিয়েই করেছি” (আহমদিয়া বাংলা ওয়েভসাইট)
আমরা বলিঃ অসি কাজ মসী দিয়ে করা গেলে মোহাম্মদ সাঃ তাঁর জীবনে এত যুদ্ধ করতেন না, আর আল্লাহও বলতেন না......... “কাফির ও মুনাফিরকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করুন ও কঠোর হন, তাদের বাসস্থান জাহান্নাম, তা কতই না নিকৃষ্ট স্থান” (সুরা তাওবাহ-৭৩)
তাই আবারো বলি-
“নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ঈসার উপমা আদমের উপমার মত; তিনি তাকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করে বললেন, হও, তখন হয়ে গেল। এ সত্য আপনার রবের নিকট হতে; তাই সন্দেহকারী হবেন না” (সূরা আলে ইমরান-৫৯ এবং ৬০ নং আয়াত)
আদম আঃ যেইরুপ পিতা মাতা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে সেইরুপ ঈসা আঃ ও পিতা ছাড়া জন্মেছে। আর আল্লাহই বলছেন, আদম আঃ এর জন্ম যেই রকম সত্য ঈসা আঃ এর জন্ম এবং মু’জেযা সবই সত্য আর সংশয়বাদীদের অন্তর্ভুক্ত না হতে আল্লাহর নির্দেশ, কেননা আল্লাহর নিকট কিছু করা অতি সহজ, উনি শুধু বলেন, ‘হও’ আর অমনি তা ‘হয়ে যায়’।
ঈসা আ; এর প্রতি প্রত্যেকটা মু’জেযা ছিল সুস্পষ্ট---
(কাদিয়ানিদের আরেকটা কথা হচ্ছে মোহাম্মদ সাঃ যা পারেন না তা কোন নবীই পারেন না। এটা হচ্ছে একটা ভন্ডামী আর ইসলাম সম্পর্কে কিছু না জানার ফল। প্রত্যেকটা নবীর মু’জেযা ছিল আলাদা ও স্বতন্ত্র।)
“সে (মরিয়ম) ছেলের প্রতি ইংগিত দিল; তারা বলল, কোলের শিশুর সাথে কিভাবে কথা বলব? শিশু বলল, নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর বান্দাহ। আমাকে তিনি কিতাব প্রদান করেছেন, এবং আমাকে নবী করেছেন” (সূরা মরিয়াম-২৯ এবং ৩০ নং আয়াত)
কাদিয়ানিরা কি এসব আয়াত দেখে না?? ঈসা আঃ জন্মের পরপরই কথা বলেছেন, তার জন্মই হয়েছে অলৌকিকভাবে পিতা ছাড়া!! এসব কি ‘ব্যতিক্রম’ নয়?? আল্লাহর পক্ষে সবই সহজ, তিনি শুধু বলেন ‘কুন’ অমনি তা হয়ে যায়। আর ঈসা আঃ কে আকাশে নেওয়াতো কোন ব্যাপারই না। আর এটা তার নীতি বিরুদ্ধও নয়, যেই রকম পিতা ছাড়া জন্মানো কিংবা ছোট বেলায় কথাও তার নীতি বিরুদ্ধ নয়। বরং নবী রাসূলদের বেলায় এটাই আল্লাহর নীতি যে তারা ব্যতিক্রম মু’জেযা বা নিদর্শন দেখাবে।
ঈসা আঃ এর আরো কিছু স্পষ্ট ব্যতিক্রম মু’জেযা (মু’জেযা ব্যতিক্রমই হয়)—
“যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা ইবনে মরিয়ম! আমার নেয়ামতের কথা স্মরন কর যা তোমার ও তোমার মাতার প্রতি ছিল। জিব্রাইল দ্বারা তোমাকে সাহায্য করেছি, তুমি মানুষের সঙ্গে কথা বলতে দোলনায় ও পরিণত বয়সে-তোমাকে কিতাব, হিকমাত, তাওরাত ও ইনজিল শিক্ষা দিয়েছি; আর আমার অনুমতিতে মাটি দিয়ে পাখির আকৃতি ঘটন করে ফুঁক দিলে, তা আমার হুকুমে উড়ত। আমার অনুগ্রহে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রুগীকে ভাল করতে, আমার হুকুমে মৃতকে জীবিত করতে.........” (সূরা মা’ইয়িদা-১১০)
কাদিয়ানিরা বলে এখানে মৃতকে আত্মিকভাবে জীবিত করেছেন!! তাদের প্রতি আল্লাহর এই আয়াত, “এ সত্য আপনার রবের নিকট হতে; তাই সন্দেহকারী হবেন না” (সূরা আলে ইমরান-৬০)
আর আত্মিক ভাবে জীবিত করন কোন নিদর্শন হতে পারেনা। যে কেউই যে কাউকে আত্মিক ভাবে জীবিত করার দাবী করতে পারে। কারণ আত্মিকভাবে জীবিত করা স্পষ্ট নিদর্শন নয়। আর ঈসা আ; এর এসবই স্পষ্ট নিদর্শন। আর কাফেরদের সামনে যখন তিনি এসব অলৌকিক কার্য করে দেখালেন তারা বলল, আল্লাহর ভাষায়, “তুমি তাদের সামনে প্রকাশ্য নিদর্শন আনলে, তখন কাফেররা বলল, এতো শুধু যাদু” (সূরা মা’ইয়িদা-১১০)
আত্মিকভাবে জীবিত করলে, প্রকাশ্য যাদু বলার কোন কারণ নেই। ব্যাপারটা এই রকম, আমি দাবী করলাম (যেই রকম আমাদের দেশে সূফীরা দাবী করে) আমি ঐ ব্যক্তিকে আত্মিকভাবে জীবিত করলাম। এতে কারোই কিছু যায় আসেনা, কারণ আত্মিকভাবে জীবিতকরণ প্রমাণ করা যায়না। অন্যথায় কেউ যদি মৃত মানুষকে জীবিত করে তাহলে আপনাকে মানতে হবে এটা অলৌকিক কিংবা আপনি বলবেন এটা যাদু, যেইরকম কাফিররা বলেছে। আসলে মির্জা কাদিয়ানি, ইসলামটাকেই আধ্যাত্মিক বানিয়ে দিয়েছে আর কোরআন কে আধ্যাত্মিক বই বানিয়ে দিয়েছে কারণ ব্রিটিশদের জন্য তা দরকার ছিল। অথচ আল্লাহর কোরআন স্পষ্ট এবং আল্লাহর রাসূলদের মু’জেযা ও প্রকাশ্য। আর কোরানের কোন কিছু রুপক হতে হলে, তা কোরয়ানেই বলে দেয়া লাগবে কিংবা কোন সহীহ হাদীসে। আর সকল নবী রাসূলদের মো’জেযাই ছিল প্রকাশ্য, বাস্তব, এক্ষেত্রে সবই সত্য।
ঈসা আঃ জন্ম থেকেই অলৌকিক ভাবে জন্মেছেন পিতা ছাড়া। তিনি মাটি দ্বারা পাখি তৈরি করে উড়িয়েছেন, জন্মান্ধকে ভাল করেছেন, মৃতকে জীবিত করেছেন। এছাড়া তার সাথীরা যখন তাঁকে আসমান থেকে খাদ্য আনতে বলল, তখন আসমান থেকে খাদ্য আসল (সূরা আল মায়েদা-১১২ থেকে ১১৫), এছাড়া তাঁর মা মরিয়ম আ; এর কাছের আসমান থেকে খাদ্য এসেছিল, “...যখন যাকারিয়া তাঁর কক্ষে যেতেন, কিছু খাবার দেখতেন; বলতেন, হে মারইয়াম! তোমার কাছে এসব কোত্থেকে আসে? বলতেন, তা আল্লাহর পক্ষ হতে আসে...” (সুরা আলে ইমরান ৩৭)
Subscribe to:
Posts (Atom)